
আসনে জয়-পরাজয়ের চাবিকাঠি সংখ্যালঘু ভোট: ঐক্যের অভাবে কাজে আসছে না ‘কিংমেকার’ হওয়ার সুযোগ
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে প্রায় দেড় কোটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভোটার। নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ২০০টিরও বেশি সংসদীয় আসনে এই জনগোষ্ঠীর ভোট সরাসরি নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। বিপুল এই ভোট ব্যাংক সুসংগঠিত হলে আগামী দিনে দেশের রাজনীতিতে সংখ্যালঘুরা ‘কিংমেকার’ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংখ্যাতত্ত্ব ও ভোটের সমীকরণ :
ভোটার পরিসংখ্যান ও আসনভিত্তিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। সংখ্যাতত্ত্ব বলছে:
দেশের প্রায় ৯০টি আসনে হিন্দু ভোটারের সংখ্যা ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজারের মধ্যে।
প্রায় ১০০টি আসনে এই সংখ্যা ৫০ থেকে ৬৯ হাজার।
আরও ১১০টি আসনে ২৫ থেকে ৪৯ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন।
নির্বাচনে যেখানে কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়, সেখানে এই বিপুল সংখ্যক ভোট যেকোনো দলের জন্যই ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার মূল চাবিকাঠি।
নেতৃত্বের সংকট ও দুর্বল প্রতিনিধিত্ব :
বিপুল ভোটশক্তি থাকা সত্ত্বেও জাতীয় রাজনীতিতে সংখ্যালঘুরা এখনো সংগঠিত শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। এর মূল কারণ হিসেবে নেতাদের মধ্যে ঐক্যের অভাব এবং সমন্বিত রাজনৈতিক কৌশলের অনুপস্থিতিকে দায়ী করা হচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের পরিসংখ্যান বলছে, সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব মাত্র ৫ শতাংশ, যা তাদের জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা ছাড়া সাধারণ আসনগুলোতে বড় রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রবণতাও খুব সীমিত। ফলে জাতীয় নীতি ও আইন প্রণয়নে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রভাব খুব একটা দৃশ্যমান নয়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: (প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য)
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংখ্যালঘুদের ভোট বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন দিকে ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে তারা নিজেদের শক্তির জানান দিতে পারছে না। তাদের দাবি আদায়ে ও জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে হলে নিচের পদক্ষেপগুলো জরুরি:
১. একটি ঐক্যবদ্ধ সংখ্যালঘু প্ল্যাটফর্ম বা জোট গঠন করা।
২. আগাম নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়া এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৩. রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘বারগেইনিং’ বা শক্ত অবস্থান থেকে আলোচনার ব্যবস্থা তৈরি করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেড় কোটি ভোটার যদি একটি ছাতার নিচে এসে সংগঠিত হতে পারে, তবে তা কেবল ভোটের অংকই বদলে দেবে না, বরং জাতীয় রাজনীতিতে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। নতুবা ‘কিংমেকার’ হওয়ার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেবল ঐক্যের অভাবে তারা ‘ভোটব্যাংক’ হিসেবেই ব্যবহৃত হতে থাকবে।