
দান করলেই হবে না, চিনতে হবে 'সঠিক পাত্র': জেনে নিন দান সম্পর্কিত শাস্ত্রীয় নির্দেশিকা
ডেস্ক রিপোর্ট: দান বা চ্যারিটি—শব্দটি ছোট হলেও এর ব্যাপ্তি বিশাল। সমাজের বহু মানুষ নিয়মিত দান-ধ্যান করেন, কিন্তু অনেকেই জানেন না যে দান করলেই সর্বদা পুণ্য লাভ হয় না। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ভুল পাত্রে বা অযোগ্য ব্যক্তিকে দান করলে তা ফলহীন হতে পারে। তাই দান করার আগে 'সঠিক পাত্র' নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি শাস্ত্রীয় চিন্তাবিদ এবং ধর্মীয় বিশ্লেষকরা দানের সঠিক নিয়ম ও পাত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন।
দান আসলে কী?
শাস্ত্র মতে, দান মানে কেবল অর্থ প্রদান নয়। নিজের অধিকারবোধ ত্যাগ করে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য কিছু নিবেদন করাই হলো প্রকৃত দান। তবে এই দান সার্থক করতে হলে দাতা ও গ্রহীতা—উভয়কেই হতে হয় নির্দিষ্ট গুণের অধিকারী।
১. দানের জন্য যোগ্য পাত্র কে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, দান যদি যোগ্য হাতে না পড়ে তবে তা আত্মশুদ্ধির বদলে বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে। শাস্ত্রানুসারে যোগ্য পাত্রের কিছু বিশেষ গুণ থাকা আবশ্যক:
যিনি ভগবদ্ভক্তিতে নিয়োজিত এবং সত্যনিষ্ঠ।
যিনি সদাচারী, সংযমী এবং জ্ঞানের চর্চায় মগ্ন।
যাঁর জীবন ঈশ্বরের সেবায় উৎসর্গীকৃত।
এই ধরনের সাধু বা ভক্তদের দান করলে তা কেবল দাতারই নয়, সমগ্র সমাজের কল্যাণ বয়ে আনে।
২. শ্রেষ্ঠ দান: ভগবানের সেবা
শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী, জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ দান হলো ভগবানের সেবায় দান করা। মন্দির নির্মাণ বা সংস্কার, নামসংকীর্তন প্রচার, প্রসাদ বিতরণ এবং ধর্মগ্রন্থ প্রকাশের মতো কাজে অর্থ সহায়তা সরাসরি ঈশ্বরসেবা হিসেবে গণ্য হয়। এই দান মানুষকে কর্মফলের বন্ধন থেকে মুক্ত করতে সহায়তা করে।
৩. আর্তমানবতার সেবা ও শিক্ষার প্রসার
শুধুমাত্র ধর্মীয় ক্ষেত্রই নয়, সমাজসেবাতেও দানের গুরুত্ব অপরিসীম। শাস্ত্র ক্ষুধার্থ, দুর্বল ও অসহায় মানুষকে সহায়তা করাকে মহৎ গুণ হিসেবে স্বীকার করে। তবে শর্ত থাকে যে, এই সাহায্য যেন তাদের মঙ্গলের জন্য হয়, কোনো দুষ্কর্মের জন্য নয়। এছাড়া, যারা জ্ঞানপিপাসু বা বিদ্যার্থী, তাদের গ্রন্থ বা শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সাহায্য করাকে ‘মহাদান’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে।
৪. সতর্কবার্তা: অযোগ্য পাত্রে দান করবেন না
দান করার ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতাবার্তাও দেওয়া হয়েছে। এমন ব্যক্তিকে দান করা উচিত নয় যারা:
অধর্মে লিপ্ত।
মদ, জুয়া বা নেশাজাতীয় দ্রব্যে অর্থ ব্যয় করে।
দানের অর্থের অপব্যবহার করে পাপের পথে চলে।
এদের দান করলে দাতা ও গ্রহীতা উভয়েরই অকল্যাণ হয় বলে শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে।
৫. দানের সঠিক পদ্ধতি
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, শুধু টাকা দিলেই হবে না, দানের ভাব বা মানসিকতাও হতে হবে শুদ্ধ। দান হতে হবে অহংকারমুক্ত এবং কোনো প্রতিদানের আশা ছাড়া। গোপনে এবং বিনয়ের সঙ্গে ঈশ্বরকে স্মরণ করে দান করাই হলো শ্রেষ্ঠ পন্থা।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, দান একটি পবিত্র কর্ম। ভুল পাত্রে দান যেমন অর্থের অপচয়, তেমনি সঠিক পাত্রে দান হলো মুক্তির সোপান। তাই আবেগের বশে নয়, বরং বিচার-বিবেচনা করে যোগ্য ভক্ত, সাধু, দুঃস্থ ও বিদ্যার্থীদের দান করাই বুদ্ধিমানের কাজ।