
সনাতন ধর্মাবলম্বী মেয়েদের টার্গেট করে প্রতারণা : আফনান খানের মন্তব্যে হিন্দু সমাজে ক্ষোভ
দেবব্রত চ্যাটার্জি দেব,দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি
বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি যেভাবে সনাতনী নারীদের উদ্দেশে বিদ্বেষপূর্ণ ও অপরাধমূলক বক্তব্য ছড়ানো হচ্ছে, তা শুধু উদ্বেগজনকই নয়—এটি একটি ভয়ংকর সামাজিক সংকটের ইঙ্গিত বহন করছে। সম্প্রতি আফনান খান নামে এক ব্যক্তির মন্তব্য এই উদ্বেগকে আরও তীব্র করেছে। আমাদের পেজে প্রকাশিত একটি সচেতনতামূলক পোস্টের নিচে তিনি প্রকাশ্যেই দাবি করেছেন যে তিনি নাকি বহু হিন্দু মেয়েকে প্রেমের প্রলোভনে ফেলে প্রতারণা ও যৌন নির্যাতন করেছেন এবং এখনও এই জঘন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এমন বক্তব্যে যেমন নারীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি সনাতন ধর্মাবলম্বী মেয়েদের লক্ষ্য করে একটি পরিকল্পিত প্রতারণামূলক চক্রের সম্ভাবনাও স্পষ্ট হয়েছে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে ধর্মীয় আবেগকে অস্ত্র বানিয়ে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলার ঘটনা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে সনাতন ধর্মের মেয়েদের বিশেষভাবে টার্গেট করা হচ্ছে, যা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির নয়, বরং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ তৈরিরও আশঙ্কা তৈরি করছে। আফনান খানের মতো ব্যক্তিদের প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি এই আশঙ্কাকে আরও গভীর করে তুলেছে। এমন মন্তব্য কোনোভাবেই সাধারণ তামাশা বা কৌতুক হিসেবে দেখা যায় না; এটি নারীর সম্মান, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি।
এই ঘটনার পর চট্টগ্রামের স্থানীয়দের প্রতি বিশেষ অনুরোধ করা হচ্ছে—যদি কেউ আফনান খানকে ব্যক্তিগতভাবে চেনে বা তার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য রাখে, তবে অবিলম্বে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করুন। এমন ব্যক্তিরা সমাজে অবাধে ঘুরে বেড়ালে যেকোনো সময় আরও বড় ধরনের অপরাধ ঘটতে পারে। তাই অপরাধের ইঙ্গিত পাওয়া মাত্রই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশে একটি বিষয় বরাবরই দেখা যায়—যখন কোনো হিন্দু যুবক কোনো ভিন্নধর্মী মেয়ের সঙ্গে একটি সাধারণ সেলফি তোলে, সেই ঘটনাটিকেই কিছু মহল বড় করে তুলে ধরে প্রোপাগান্ডা তৈরি করে। অথচ বিপরীত দিকে, যখন কোনো ব্যক্তি প্রকাশ্যে সনাতনী মেয়েদের ধর্ষণ, প্রতারণা বা শারীরিক নির্যাতনের কথা স্বীকার করে, তখন সেই ঘটনাগুলো চোখ এড়িয়ে যায় বা যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তাহলে কি বুঝতে হবে—এই দেশের আইন ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া কি শুধুই মেজরিটি পপুলেশনের জন্যই দ্রুত ও দৃঢ়ভাবে কাজ করে, আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষতি হলে সেটা তেমন গুরুত্ব পায় না? এই প্রশ্ন এখন সমাজের সামনে স্পষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নারীর প্রতি প্রতারণা, হুমকি, যৌন হয়রানি বা ব্ল্যাকমেইল—এসবই বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং ফৌজদারি দণ্ডবিধি এসব অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখেছে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধের স্বীকারোক্তি সম্বলিত মন্তব্যও আইনগতভাবে উপেক্ষা করার মতো নয়। যেকোনো আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর দায়িত্ব—এ ধরনের মন্তব্য পর্যবেক্ষণ করা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা।
HindusNews-এর পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে—সনাতনী নারীদের লক্ষ্য করে বিদ্বেষ, প্রতারণা বা যৌন হুমকি কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। আমরা চাই, রাষ্ট্র নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থান নিক। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করছি—এ ধরনের মন্তব্য, পোস্ট বা হুমকি দেখলে তা সংরক্ষণ করে দ্রুত অভিযোগ জানান। অপরাধীকে তার পরিচয় বা ধর্ম দিয়ে নয়, অপরাধ দিয়ে বিচার করতে হবে—কারণ সমাজকে বাঁচাতে মানবিকতা ও ন্যায়বিচারই সবচেয়ে বড় শক্তি।
আপনি চাইলে আমি এই প্রতিবেদনটি আরও ধারালো শব্দে, আরও সাংবাদিকতামূলক ভঙ্গিতে, অথবা সম্পূর্ণ সংবাদের মতো নিউজরুম স্টাইলে সাজিয়ে দিতে পারি।